১.৮ মৌজা গঠন ও হেডম্যান পদঃ১৮৯২ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪নং বিধিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৩টি তালুককে ১.৫ থেকে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে মৌজায় বিভক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়। এই বিধি মোতাবেক মৌজা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৩৭নং বিধিতে তিনজন রাজার ৩টি সার্কেলকে মৌজায় বিভক্ত করার পুনঃ বিধান করা হয়। সেই একই বিধিতে প্রত্যেক মৌজায় একজন করে মৌজা প্রধান(হেডম্যান) নিয়োগের বিধান রাখা হয়। তিন পার্বত্য জেলার তিনটি সার্কেলে বর্তমানে ৩৯০টি মৌজায় বিভক্ত১৪।
১.৯ হেডম্যান নিয়োগ পদ্ধতিঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪৮নং বিধিমতে সার্কেল চীফের (রাজা) সাথে পরামর্শ করে ডেপুটি কমিশনার মৌজা হেডম্যান নিয়োগ করবেন, যদিও পরামর্শ গ্রহণ এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। তবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে তাঁর পরামর্শ বিবেচনার দাবী রাখে। হেডম্যান পদটি বংশানুক্রমিক নয়। তবে হেডম্যানের উপযুক্ত পুত্র হেডম্যান পদে নিয়োগ লাভের বেলায় অগ্রাধিকারের দাবী রাখেন।
১.১০ হেডম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
ক. ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৩৮নং বিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মৌজা হেডম্যান নিষ্ঠার সাথে তার মৌজার জন্য নির্ধারিত খাজনা আদায় করবেন এবং মৌজার বকেয়া খাজনার হিসাব রাখবেন। তিনি ডেপুটি কমিশনার, মহকুমা প্রশাসক (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার) এবং সার্কেল চীফ এর আদেশ মেনে চলবেন। তিনি তার মৌজায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন এবং মৌজাস্থিত গ্রামসমূহের চাষাবাদে আয়তনের কোনো পরিবর্তন ঘটলে তৎসম্পর্কে ডেপুটি কমিশনারকে অবহিত করবেন।
খ. ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১নং বিধিমতে হেডম্যান তাঁর মৌজায় জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ করবেন। ৪২নং বিধিমতে তাঁর মৌজায় বসবাসকারী জুমিয়া জমির মালিকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করবেন। তিনি পরিবার প্রধানের নাম ও সদস্য সংখ্যা, খাজনা পরিশোধকারী কিংবা খাজনা পরিশোধে অব্যাহতি প্রাপ্ত নতুন বা পুরাতন পরিবার ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত একটি জুম তৌজি (জুমিয়ার তালিকা) প্রস্তুত করে প্রত্যেক বছর ১লা জুনের আগে সার্কেল চীফ তথা রাজার কাছে দাখিল করবেন, যা ১লা আগষ্টের আগে ডেপুটি কমিশনারের কাছে রাজাকে দাখিল করতে হবে। হেডম্যানের (খাজনার) দাবীর অন্ততঃ ৫০% রাজপূণ্যাহ্’র দিন এবং অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী বছরের ১লা জানুয়ারীর মধ্যে সার্কেল চীফের কাছে পরিশোধ করবেন। হেডম্যান যদি মনে করেন যে, কোনো প্রজা জুম খাজনা প্রদান থেকে রেহাই পাবার জন্য অন্যত্র পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে তিনি সেই প্রজার সম্পত্তি আটক করতে পারবেন এবং বিষয়টি সার্কেল চীফ ও ডেপুটি কমিশনারকে জানাবেন। যদি কোনো হেডম্যান অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণে অবহেলা করেন, তাহলে সেই প্রজার অনাদায়ী খাজনার জন্য তিনি দায়ী হবেন। ৪৩ বিধিমতে হেডম্যান তাঁর সংশ্লিষ্ট মৌজার রাজস্ব আদায় করবেন। ৪৫ বিধিমতে তিনি ঘাস ও গর্জনখোলার খাজনা এবং ৪৫(বি) বিধিমতে গোচারণ ভূমির ট্যাক্স আদায় করবেন।
১.১১ মৌজার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্বঃপার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১(এ)নং বিধির বিধানমতে মৌজা হেডম্যান তাঁর মৌজার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে দায়বদ্ধ। এই উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিবেনঃ-
ক) কোনো মৌজাবাসীকে গৃহাস্থলী কাজ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে মৌজার বনজ সম্পদ, যথাঃ- বাঁশ, কাঠ, বেত ইত্যাদি অন্য কোনো মৌজায় অপসারণ এবং অনিবাসী ব্যক্তির দ্বারা অনুরূপ কোনো কিছু অপসারণের কাজে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারবেন।
খ) মৌজাস্থ কোনো এলাকা/এলাকা বিশেষের বনজ সম্পদ সংরক্ষণের নিমিত্তে ঐ এলাকাকে জুম চাষের আওতামুক্ত ঘোষণা করতে পারবেন।
গ) যদি হেডম্যানের বিবেচনায় নবাগত কেউ জুম চাষ করলে পরবর্তী বছর মৌজাবাসীর জুম চাষে জমির সংকট দেখা দেবে বলে মনে হয় তাহলে তিনি তাঁর মৌজায় নবাগতদের জুম চাষ নিষিদ্ধ করে দিতে পারবেন।
ঘ) জুম চাষের জন্য ক্ষতিকর প্রতীয়মান হলে হেডম্যান তাঁর মৌজায় গোচারণ নিষিদ্ধ করে দিতে পারবেন।
১.১২ বসত বাড়ীর জন্য খাস জমি বন্দোবস্তী/দখলে রাখার অনুমতি প্রদানের ক্ষমতাঃ জেলা প্রশাসকের আনুষ্ঠানিক বন্দোবস্তী ব্যতিরেকে পৌর এলাকা বহির্ভূত মৌজায় মৌজা হেডম্যান তার মৌজার কোনো পাহাড়ি বাসিন্দাকে বসতবাড়ী নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ০.৩০ একর জমি ভোগ দখলে রাখার অনুমতি দিতে পারেন। তবে এসব বসতবাড়ীর জন্য দখলভূক্ত জমির হিসেবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস